ইসরায়েলের জয় কি ভারতের ওপর হামলা ডেকে আনবে? জানুন কীভাবে ভারত জ্বলে উঠবে এবং কোটি কোটি ভারতীয় বিপদে
যখন বিশ্ব মানচিত্রে যুদ্ধের আগুন জ্বলে ওঠে, তখন ভারতকে প্রায়ই দাঁড়াতে হয় দুটি কঠিন পথের সংযোগস্থলে—একদিকে আন্তর্জাতিক চাপ, আরেকদিকে নিজের কৌশলগত স্বার্থ।এবার পরিস্থিতি আরও জটিল, কারণ যুদ্ধের আগুন লেগেছে পশ্চিম এশিয়ায়, কিন্তু তার ধোঁয়ার গন্ধ ইতিমধ্যে দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছেছে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ ভারতের জন্য একটি কূটনৈতিক ধাঁধার জন্ম দিয়েছে।ভারতের একদিকে ঐতিহাসিকভাবে উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে ইরানের সঙ্গে—ভাষা, সংস্কৃতি, বাণিজ্য, এবং চাবাহার বন্দর প্রকল্পের মতো কৌশলগত অংশীদারিত্ব।অন্যদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক দশকে প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তার দিক থেকে গভীর বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে।
ভারত ১৯৫০ সালে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করলেও, ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লব ইরানকে আমেরিকা-বিরোধী অক্ষের একটি মুখ করে তোলে।অপরদিকে, ১৯৯২ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম মূল স্তম্ভ হলো ‘মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ড’—একটি বিশ্ব যেখানে শক্তি শুধু একটি বা দুটি দেশের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকবে না।কিন্তু এখন ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষে ভারত কোনো সমালোচনায় এগিয়ে না এসে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ভারত এইভাবে আমেরিকার শিবিরের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তবে বহু-মেরু বিশ্বের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে পারে।
ভারতের জন্য ইরান গুরুত্বপূর্ণ কারণ—পাকিস্তানকে বাইপাস করে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে ইরানই একমাত্র বাস্তব পথ।কিন্তু আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, এবং পশ্চিম এশিয়ায় অন্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে গিয়ে ভারত এখন ইরানের থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে।
উপসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় ৯০ লক্ষ ভারতীয় কাজ করেন, যারা বছরে কয়েকশ কোটি ডলার ভারতে পাঠান।যদি এই অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, তবে এর বিরাট প্রভাব পড়বে ভারতের অর্থনীতি এবং ওই অঞ্চলের ভারতীয়দের ওপর।
ড. মুদাসির কোমর বলেন, ইসরায়েল ভারতের জন্য প্রযুক্তিগত বন্ধুর মতো হলেও, ইরান হলো ভৌগোলিক ও বাণিজ্যিক দরজা।তালমিজ আহমেদ ও শিবশঙ্কর মেননের মতে, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ক্রমশ অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে—যা একেবারে বিপজ্জনক।
ভারত কি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে পারবে? নাকি বৈশ্বিক মেরুকরণের যুগে তাকে পক্ষ নিতে হবে?সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর না করা ভারতকে ইতিমধ্যে আমেরিকা-ইসরায়েল পন্থী হিসেবে তুলে ধরেছে।
এই মুহূর্তে ভারতের সামনে বড় প্রশ্ন—ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও ভবিষ্যতের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করবে, নাকি তা বিসর্জন দিয়ে একটি অজানা গন্তব্যের দিকে ঝুঁকে পড়বে?একটি ভুল সিদ্ধান্ত কেবল ভারতীয় কূটনীতিকদের নয়, কোটি কোটি ভারতীয়ের জীবনকেও বড় ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
Post Comment