আমরা বাঙালী অসমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টি “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” গানটিকে রাষ্ট্রদ্রোহ বলে চিহ্নিত করার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাঙালী জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘আমরা বাঙালী’। বৃহস্পতিবার সংগঠনের রাজ্য কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য সচিব গৌরাঙ্গ রুদ্রপাল বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু ভারতের নয়, সমগ্র মানবজাতির গর্ব। তাঁর গান গাওয়াকে রাষ্ট্রদ্রোহ বলা মানে গোটা বাঙালী জাতির মর্যাদায় আঘাত।
”ঘটনার সূত্রপাত অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. হেমন্ত বিশ্বশর্মা -র সাম্প্রতিক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। তিনি দাবি করেন, যেহেতু “আমার সোনার বাংলা” বাংলাদেশে জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত, তাই ভারতের মাটিতে গানটি গাওয়া “উচিত নয়”। এই মন্তব্যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে অসম ও পশ্চিমবঙ্গের বাঙালী সমাজের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।গৌরাঙ্গ রুদ্রপাল বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টির কোনও সীমানা নেই। তাঁর সাহিত্য, সংগীত ও দর্শন ভারত, বাংলাদেশ, এমনকি শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত সম্মানের সঙ্গে গাওয়া হয়। রবীন্দ্রনাথ বাঙালী জাতিসত্তার প্রতীক—তাঁর গান গাওয়া কখনও দেশবিরোধী হতে পারে না।”
তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি ও আরএসএস নেতৃত্ব পরিকল্পিতভাবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে অবমাননা করছে।সংগঠনের দাবি, করিমগঞ্জ জেলার শ্রীভূমি এলাকায় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্পী বিধূ ভূষণ দাস এই গান পরিবেশন করেন, যার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়। ‘আমরা বাঙালী’-র মতে, এটি শুধু একজন শিল্পীর উপর নয়, সমগ্র বাঙালী জাতির উপর আক্রমণ।
দলটি দাবি জানিয়েছে— অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে অবিলম্বে তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি অপমান বন্ধ করতে হবে। অসমে বসবাসকারী বাঙালী জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।‘আমরা বাঙালী’-র মতে, “আমার সোনার বাংলা”কোনও দেশের একক সম্পত্তি নয়, এটি সমগ্র মানবতার উত্তরাধিকার।
গানটি বাঙালীর মাটি, সংস্কৃতি ও ভাষার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। তাই এটিকে রাষ্ট্রদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত করা শুধু যুক্তিহীন নয়, সাংস্কৃতিক অশ্রদ্ধারও পরিচয়।সংগঠনের স্পষ্ট বক্তব্য—বাংলা ভাষা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্মানের প্রশ্নে তারা কোনও আপস করবে না।