বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক বহুল আলোচিত রায় নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। ট্রাইব্যুনাল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থান-সংক্রান্ত মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে—এমন ঘোষণা ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
রায় ঘোষণার সময় দুপুরে ধানমন্ডি ৩২ এলাকায় দুই পক্ষের সমাবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে কড়া অবস্থান নিতে হয় এবং পরে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সকাল থেকেই রায়ের সম্ভাব্য কঠোরতা নিয়ে জল্পনা ছিল, আর ঘোষণার পর তা দ্রুত রূপ নেয় রাস্তায় বিক্ষোভে।
ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের বেঞ্চের প্রধান বিচারপতি গোলাম মোর্তাজা মজুমদার ৪৫৩ পাতার রায়ে উল্লেখ করেন যে জুলাইয়ের ঘটনাবলিতে ছাত্রদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল এবং নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সে সময়কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা হাসিনাকেই এই ঘটনার জন্য প্রধানভাবে দায়ী করা হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ থাকে। কামাল এবং পুলিশের প্রাক্তন আইজি চৌধুরী আবদুল্লা আল মামুনের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হয়। মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই রায়ের আগে থেকেই বিদেশে অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা। বাইরে থেকেই তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে একটি বার্তা পাঠান, যাতে তিনি রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন। রায় ঘোষণার পর তাঁর দল আওয়ামী লীগ আবারও দেশব্যাপী প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। দলটি এর আগে ফেব্রুয়ারির নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনের আগে নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ায় উত্তেজনা আরও ঘনীভূত হয়। গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের ডাকা ‘লকডাউন’-এর প্রভাব রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্রভাবে অনুভূত হয়।
অন্যদিকে, বামপন্থী রাজনৈতিক শক্তিগুলো হাসিনার শাসনামলের নানা সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেও, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মহম্মদ ইউনুসের সময় বিরোধীদের ওপর আক্রমণ, ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব এবং পররাষ্ট্রনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র-ঘনিষ্ঠ অবস্থানের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করে আসছে। নতুন রায়কে কেন্দ্র করে এই বিরোধী পক্ষগুলোও রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে এমন একটি আলোড়ন সৃষ্টি করা রায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইতিমধ্যেই ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা এবং রায়ের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ঢাকা এখন কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও অস্থিরতা স্পষ্ট। দেশজুড়ে উত্তেজনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও এক অশান্ত রাজনৈতিক অধ্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।