
ত্রিপুরা রাজ্যে কৃষিতে অর্গানিক বিপ্লব গড়ে তুলেছে রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর। বুধবার আগরতলার হোটেল পলো টাওয়ার্স-এ আয়োজিত প্রথম অর্গানিক বাইয়ার-সেলার কনফারেন্সে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রতন লাল নাথ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ২৫,০০০ হেক্টরেরও বেশি জমিকে সার্টিফায়েড অর্গানিক জমিতে পরিণত করা হয়েছে।
গত তিন বছরে রাজ্য থেকে ১,৩৩২ মেট্রিক টনেরও বেশি অর্গানিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে ও আন্তর্জাতিক বাজারে। এর মধ্যে রয়েছে ৬৬৬ মেট্রিক টন আনারস, ৩৩ মেট্রিক টন সুগন্ধি চাল, ৭ মেট্রিক টন বার্ডস আই লঙ্কা, ৫৭৪ মেট্রিক টন আদা ও ৫২ মেট্রিক টন হলুদ।
মন্ত্রী বলেন, “আজকের বিশ্ব কেবল খাবার চায় না, চায় নিরাপদ ও রাসায়নমুক্ত খাদ্য। অর্গানিক চাষ ভবিষ্যতের জন্য একমাত্র সমাধান। ত্রিপুরা সেই অভিযানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।”
কনফারেন্সে অংশ নেন ৩৭ জন ক্রেতা, যার মধ্যে ৩২ জন রাজ্যের বাইরে থেকে আসেন। এদিন রাজ্যের বিভিন্ন অর্গানিক পণ্যের জন্য মোট ৪০টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩২ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা।
ত্রিপুরা সরকার ৫৩টি অর্গানিক ফার্মার প্রোডিউসার কোম্পানি (FPC) গঠন করেছে, যেগুলোকে স্বীকৃত সার্টিফিকেশন সংস্থাগুলির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জিআই ট্যাগপ্রাপ্ত কুইন ও কিউ আনারস, বার্ডস আই লঙ্কা, কালো চাল (মাইমি হুঙ্গার), হরিনারায়ণ ও কালিখাসা সুগন্ধি চাল, তিল, হলুদ, আদা, মিলেট এবং সুগন্ধি লেবুর চাষে।
মন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা শুধু অর্গানিক উৎপাদন নয়, বরং ‘ফার্ম টু ফর্ক’ ইকোসিস্টেম গড়ে তুলছি। কৃষকদের উৎপাদন এখন শুধু রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু থেকে শুরু করে ওমান, দুবাই ও ঢাকাতেও পৌঁছে যাচ্ছে।”
ত্রিপুরার সুগন্ধি চাল ও লঙ্কার গুণাগুণ নিয়েও মন্ত্রী আলোকপাত করেন। বার্ডস আই লঙ্কায় ক্যাপসাইসিনের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি হজমে সাহায্য করে ও প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবেও কাজ করে। সুগন্ধি লেবুতে থাকা তীব্র সাইট্রাস ঘ্রাণ পারফিউম ও অ্যারোমাথেরাপিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, “ত্রিপুরা হয়তো আয়তনে ছোট, কিন্তু আমাদের উদ্যোগ ও আত্মবিশ্বাস অনেক বড়। অর্গানিক ত্রিপুরা হবে ‘অর্গানিক ইন্ডিয়া’র অন্যতম চালিকাশক্তি।”
এই কনফারেন্স যে শুধুমাত্র একটি বাণিজ্যিক মঞ্চ নয়, বরং একটি বৃহৎ কৃষি অভিযানের অংশ—তা বারবার উঠে আসে কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যে। ত্রিপুরা আজ অর্গানিক বিপ্লবের পথিকৃৎ।