
xr:d:DAF9txjWCsg:7,j:961938223130336768,t:24022415
উদয়পুর মাতাবাড়ি মন্দির চত্বরে আজ প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে প্রবেশ করে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলেন দুই স্থানীয় বিধায়ক—বিজেপির জিতেন্দ্র মজুমদার ও কংগ্রেসের অভিষেক দেবরায়। এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুতর ফাঁকফোকর প্রকাশ্যে চলে আসায় প্রশাসনিক মহল থেকে রাজনৈতিক অঙ্গন সর্বত্রই তীব্র চর্চা শুরু হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী দুপুরবেলায় মাতাবাড়ি মন্দিরে পূজার্চনা করছিলেন। ঠিক সেই সময় ব্যারিকেডের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন কাকড়াবন-শালগড়া কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক জিতেন্দ্র মজুমদার। তাঁর নেতৃত্বে কয়েকজন সমর্থকও জোর করে ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আগেই পেছন থেকে স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক অভিষেক দেবরায়ও নিজের অনুগামীদের নিয়ে একইভাবে নিরাপত্তা বলয় অমান্য করেন।নিরাপত্তা আধিকারিকরা বারবার থামানোর চেষ্টা করলেও অভিষেক দেবরায় তা উপেক্ষা করেন। ঘটনাস্থলের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে পুলিশ আধিকারিকরা বিধায়কের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছেন, কিন্তু তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরছেন না।বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় প্রতিটি পদক্ষেপ পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী নেওয়া হয়। সেখানে এমন অনধিকার প্রবেশ একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি কেবল নিরাপত্তা প্রোটোকল লঙ্ঘন নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবেও দেখা যেতে পারে। বিশ্লেষকদের দাবি, এসপিজি-র মতো সংস্থার উপস্থিতিতেও যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, তবে সেটি মারাত্মক উদাসীনতার ইঙ্গিত বহন করে।ঘটনার সময় নিরাপত্তা বাহিনী লাঠিচার্জ বা জলকামান ব্যবহার করেনি। সূত্রের খবর, প্রশাসন আশঙ্কা করেছিল কড়া পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে পড়তে পারে। যদিও এতে প্রশ্ন উঠছে—একই সঙ্গে ভিআইপি নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে?ঘটনার পরও এখনো পর্যন্ত কোনো পুলিশি মামলা বা আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রশাসনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটনার বিস্তারিত জানায়নি। এই নীরবতা রাজনৈতিক মহলে আরও জল্পনা তৈরি করেছে।ঘটনাটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবল আলোচনা শুরু হয়েছে। বিজেপির অভ্যন্তরেই মতভেদ দেখা দিয়েছে। একদিকে দলের বিধায়ক জিতেন্দ্র মজুমদারের এমন পদক্ষেপে শাসকদলের অস্বস্তি বাড়ছে, অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা অভিষেক দেবরায়ের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা তীব্র হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের অনেকে মনে করছেন, দলীয় অনুগামীদের দেখানো বা প্রভাব বিস্তার করার উদ্দেশ্যে দুই বিধায়কই এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু এই আচরণে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, গোটা ঘটনার ওপর প্রাথমিক তদন্ত শুরু হতে পারে। যদি এসপিজি আনুষ্ঠানিকভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে, তবে ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীর সফরে নিরাপত্তা আরও কড়াকড়ি হবে। বিশেষ করে ধর্মীয় স্থানে সফরের ক্ষেত্রে প্রশাসনের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হবে।ঘটনার পর অভিষেক দেবরায়ের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। স্থানীয় মহলে আলোচনা, তিনি হয়তো দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। অন্যদিকে বিজেপি নেতৃত্বও জিতেন্দ্র মজুমদারের ভূমিকা নিয়ে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেনি, তবে অন্দরমহলে ক্ষোভ রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।স্থানীয় মানুষের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের মতো গুরুতর মুহূর্তে এমন বিশৃঙ্খলা একেবারেই কাম্য নয়। সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য যে নিয়ম মানতে হয়, সেখানে জনপ্রতিনিধিরাই যদি নিয়ম ভঙ্গ করেন, তাহলে জনগণ কী বার্তা পাবে?উদয়পুর মাতাবাড়ি মন্দিরে প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিন ঘটে যাওয়া এই ঘটনা শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি নয়, রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক চিত্রও তুলে ধরল। জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বশীল আচরণের অভাব এবং প্রশাসনিক গাফিলতি মিলিয়ে পরিস্থিতি যে আরও জটিল হয়ে উঠছে, তা স্পষ্ট। এখন দেখার বিষয়, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তদন্তে কী উঠে আসে এবং সংশ্লিষ্ট দুই বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না।শুধু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে এই ঘটনার প্রভাব আগামী দিনে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।